প্রেতাত্বাদের রাত (হরর গল্প)




হোটেল থেকে বের হয়ে যখন গাড়িতে উঠতে যাবে রাবিদ তখন হোটেল ম্যানেজারকে দেখল ড্রাইভারকে বলছে ,আজকে কিসের রাত মনে আছে তোমাররাদায়েদ খেয়াল করল ড্রাইভার পাংশুটে মুখে বলল, জী স্যারযেখানে স্পষ্ট ভয়ের প্রতিচ্ছবি ছিল ড্রাইভারে চোখে
হোটেল ম্যানেজার রাবিদের কাছে এসে বলল,সাবধানে যাবেন স্যাররাবিদ হাসিমুখে হোটেল ম্যানেজারকে বিদায় জানিয়ে ড্রাইভারকে  গাড়ি চালাতে বলল
রাবিদের মাথায় তখন হোটেল ম্যনেজারের বলা কথাটা বারবার মনে হতে লাগলোতাই সে ড্রাইভারকে জিজ্ঞাস করল,
আজকে কিসের রাত?
ড্রাইভার রাবিদের দিকে পিছনে একবার তাকিয়ে আবার সামনের দিকে তাকিয়ে কিছু বলল নামনে মনে কি যেন পড়লপ্রশ্নের উত্তর না দেয়ায় রাবিদ একটু রেগে গেলসে আবার বলল,
কই ,বললে না আজকে কিসের রাত
ড্রাইভার এবার বলে উঠলো,আজকে প্রেতাত্ত্বাদের রাত
রিয়াদ বিস্মিত কন্ঠে বলল, মানে!
আজ রাতে সব প্রেতাত্ত্বারা জেগে উঠবেদয়া করে এই বিষয় নিয়ে আর কিছু বলবেন নাঅনুরোধের সুরে ড্রাইভার বলে উঠল
রাবিদ এবার বিরক্ত বোধ করলসে কখনো এসব ভুত প্রেত বিশ্বাস করে না।আর এত সময় ধরে ড্রাইভার আর ম্যানেজারের ভয়ের কারনটা বুঝতে পেরে রাগটা একটু বেশি হল।তবু সে ড্রাইভারকে কিছু না বলে চুপ করে রইল।কিছু দূর যেতে রাবিদ দেখল তারা যে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে তার বামদিকে একটি রাস্তা চলে গেছে।কিন্তু ড্রাইভার সেই রাস্তা ক্রস করে বরাবর চলছে।রাবিদ আবার প্রশ্ন করল,
বাম দিকের রাস্তা কোন দিকের?
বাম দিকে কোনো রাস্তা নেই স্যার।
ড্রাইভার স্পষ্ট ভিতু কন্ঠে বলে উঠল।রাবিদ এবার নিজের রাগ ধরে রাখতে না পেরে বলল,
তুমি কি আমার সাথে মজা করছো। স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে বাম দিক দিয়ে একটা রাস্তা গেছে ।আর তুমি বলছ বাম দিকে কোনো  রাস্তা নেই ।গাড়ি থামাও এখনই।
ড্রাইভার বাধ্য হয়ে গাড়ি থামিয়ে বলল, আপনি যে রাস্তাটি দেখছেন এটি প্রেতাত্ত্বাদের রাস্তা।এই রাস্তা প্রেতাত্ত্বাদের গ্রাম পর্যন্ত গেছে ।এদিক দিয়ে কোনো মানুষ আসা-যাওয়া করে না।
রাবিদ ড্রাইভারকে গালি দিয়ে বলল, বাম দিকের রাস্তা দিয়ে যেতে।সেখানে কি আছে রাবিদ তা দেখতে চায়।কিন্তু ড্রাইভার ভয়ে থর থর করে কাপছে আর মোবাইলে সময় দেখে উত্তেজিত হয়ে বলল।আমাদের এখনই এখান থেকে যেতে হবেবলেই সে আবার গাড়ি স্টার্ট দিল।রাবিদ এবার গাড়ি থেকে নেমে বলল, আমি সেখানেই যাবো।ড্রাইভার তাকে অনুরোধ করে বলা শুরু করল,দয়া করে উঠে বসেন স্যার।আজকে প্রেতাত্তারা ঘুম থেকে জেগে উঠবেআমাদের এখনই এই জায়গা ছেড়ে জেতে হবে।
রাবিদ ড্রাইভারকে ধমক দিয়ে বলল,চুপ কর ভীতু কোথাকার।তুমি চাইলে চলে যেতে পারো।আমি একাই যাব সেখানে।
ড্রাইভার মনে হয় এই কথারই অপেক্ষা করছিল।সাবধানে থাকবেন স্যার বলেই সে গাড়ি ঘুরিয়ে চলে গেলো।
রাবিদ সেই বাম দিকের পথ দিয়ে এগিয়ে চলছে।চারদিকের হাওয়া আর চাঁদের পূর্ণ আলোয় সে খুব এনজয় করে চলছে।মনে মনে ভাবছে মানুষ কতই না বোকা।ভুত-প্রেতে কেউ বিশ্বাস করে আজকের এই দিনে।হেসে দেয় রাবিদ। হাটতে হাটতে হঠাৎ রাবিদ দেখতে পায় সে একটি ধ্বংসাস্তুপ গ্রামে চলে এসেছে।গ্রামের ঘর-বাড়ি দেখে মনে হচ্ছে শত বছর আগে এগুলো বানানো হয়েছিলো।কিন্তু কালের বিবর্তনে এগুলো আজ ধ্বংসের পথে।কিছু সামনে যেতে দেখতে পায় একটি কবরস্তান।রাবিদ আশ্চর্য হয়ে পরে কবর গুলো দেখে।কারন সবগুলো কবরের উপর ক্রুশ চিহ্ন দেয়া।তারমানে এটা খ্রিস্টান্দের কবরস্থান।বাড়িগুলোর দিকে তাকিয়ে রাবিদ বুঝতে পারে এটা এককালে খ্রিস্টান্দের গ্রাম ছিল।কারন কিছু কিছু বাড়ির উপরও ক্রুশ চিহ্ন বানানো।বাড়ি না বললেই ভাল হবে।কারন সবগুলো বাড়িই প্রায় ধ্বসে গেছে।সামনে এগিয়ে রাবিদ একটি  দুতালা বাড়ি দেখতে পায়।বাড়িটির মধ্যে ধ্বংসের কোন চিহ্ন নেই।শুধু অনেক বছর ধরে থাকতে থাকতে কিছুটা মলিন হয়ে গেছে।বাড়িটির চারপাশে এখনো কাঠের তৈরী বেড়াগুলো কোনোরকম দাঁড়িয়ে আছে।রাবিদ বাড়িটির ভিতর প্রবেশ করল।ঘরের মধ্যে পুরো অন্ধকারে ভরপুর।বাইরে থেকে চাদের আলোয় যতটুকু দেখা যায় তাতে সামান্য কিছু দেখতে পারছে।আরো ভিতরে ডুকবে নাকি ডুকবেনা দ্বিধায় পরে অবশেষে মোবাইলের ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে ভিতরে ডুকল।বুঝাই যাচ্ছে এককালে এটি একটি অভিজাত বাড়িই ছিলো বটে।তেমন কিছু দেখার কিছু নেই ভেবে যখন সে বের হতে যাবে ।তখনই  একটি মেয়ের তৈলচিত্রে চোখ পরল।এই অন্ধকার আর মাকড়শার জালে ভরপুর অবস্থাতেও চিত্রটি স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।মনে হচ্ছে সেখান থেকে আলো বের হয়ে আসছে।রাবিদ তৈলচিত্রের সামনে গিয়ে মাকড়সার জাল গুলো ছাড়িয়ে নিলো।রাবিদ একদৃষ্টিতে হতভম্বের মতো তাকিয়ে থাকলো তৈলচিত্রটির দিকে।কোন এক অনিন্দ্য সুন্দরী তরুনীর চিত্র মনে হল তার কাছে।দেখে মনে হচ্ছে না সে বাঙ্গালী।রাবিদের মনে হল এরকম একটা জায়গায় বহুবছর আগে কারা বাস করত যারা বাঙালি ছিল না।খ্রিস্টান ধর্মালম্বি ছিল আর এই অনিন্দ্যসুন্দরী কে ছিল।
রাবিদ কিছুটা অন্যমনস্কই হয়ে পরেছিল।কিন্তু রাবিদ কখনো ভাবতেও পারে নি সেই অনিন্দ্যসুন্দরী তারই পিছে দাঁড়িয়ে তার দিকে তার মতই অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে।আশেপাশে  আরো কিছু যুবক-যুবতী,বৃদ্ধারাও তার দিকে অপলক তাকিয়ে আছে।বোকা ড্রাইভারের ভাষায় যাদেরকে বলা হয় প্রেতাত্ত্বা।   

লেখক: রিয়াদ আলম

Post a Comment

Previous Post Next Post