’আমি এবং মধ্যবয়স্ক জুটি’ গল্প

StorialTech


আমি অপু।পড়া-লেখা শেষ করে প্রাইভেট একটা কোম্পানীতে চাকরী করছি।গতকাল ঢাকায় এসেছি। কোম্পানী থেকে আমাকে একটা ট্রেনিং এ পাঠিয়েছে।তাই রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পরি। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে সোজা ট্রেনিং এ রওয়ানা দেই।

ট্রেনিং শেষ হতে হতে প্রায় ২:০০ বেজে যায়। তাই আর হোস্টেলে না গিয়ে বাইরে খাওয়া দাওয়া শেষ করে কলেজের দিকে রওয়ানা দেই। অনেক দিন পর ঢাকায় আসা হলো প্রায় দুই বছর হবে। তাই ভাবলাম কলেজটা দেখে যাই। এখানে অনেক স্মৃতি আছে বিশেষ করে তমার সাথে কাটানো দিনগুলি খুবি ইস্পেশাল। কলেজের পাশে একটা লেক আছে ওখানে প্রায়ই বসতাম। এখানে একটা বেঞ্চ এ বসে বসে ঐদিনগুলির কথা ভাবছিলাম। হঠাৎ কেউ আমাকে বলল...
.
- ভাই সাহেব..?
আমি ফিরে তাকালাম আর মনে। বয়স ৪৮-৫০ বছর হবে একজন লোক।
- জ্বি, আমাকে বলছেন..?
লোকটাকে একটু যেন বিব্রত মনে হল। বলল,
- জ্বি, আপনাকে একটা অনুরোধ করতে চাচ্ছি ? করবো..?
- আপনি কি এই জায়গাটা ছেড়ে উঠবেন একটু ? আমি আর আমার বউ এখানে নিয়মিত বসি।
একটু বিরক্ত হলাম মনে মনে। এ কেমন কথা হল ? দেখতেছে একজন বসে আছে, কি বেকুবের মত এসে বলল আমি আর আমার বউ এখানে নিয়মিত বসি।মুখে বললাম,
- এখানেই বসবেন..?
লোকটি আবার খানিকটা লজ্জিত কন্ঠে বলল,
- আসলে আমার কোন সমস্যা নাই। এক জায়গায় বসলেই হল কিন্তু দুষ্টু মেয়ের এই জায়গা ছাড়া চলেই না।
আমি মনে মনে বললাম একবার বলে বউ আর একবার বলে মেয়ে।
- দুষ্টু মেয়ে..?
লোকটা এবার একটু হাসলো। বলল
- দুষ্টু মেয়ে আমার বউ।
আমি কখন থেকে লক্ষ্য করছি লোকটি বারবার কথার সময় কেবল বউই বলছে। সাধারনত অপরিচিত কারো সাথে কথা বলার সময় কেউ বউ শব্দটা ব্যবহার করে না ।
এই লোকটা কেন করছে কে জানে..? আমি বললাম,
- এখনই উঠবো..?
- নাহ। এখনই উঠতে হবে না। ও এখনও আসে নি । ও আসলে উঠলে চলবে।
- আচ্ছা।
আমি আবার লেকের পানির দিকে মনস্তির করার প্রস্তুতি নিলাম। দেখলাম লোকটি আমার পাশেই বসে পড়লো। আমাকে বলল,
- ভাইজান যদি বিরক্ত না হন তাহলে একটু কথা বলি। বউ না আসা পর্যন্ত।
- আপনার স্ত্রী কোথায় গেছে..?
- মনে হয় ওর বাবার বাসায় গেছে।
- মনে হয় কেন বলছেন ? আপনি সিওর জানেন না..?
লোকটিকে একটু বিভ্রান্ত মনে হল। খানিকটা চিন্তিতো মনে হল। নিজের স্ত্রী কোথায় যেতে পারে সেটা নিয়ে খানিকটা চিন্তায় আছে।
আমি বললাম,
- ফোন দেন।
আমার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে লোকটা বলে উঠলো,
-না না। এই কাজটা করা যাবে না। ও এখন আমার উপর রেগে আছে। এখন ফোন দিলে আরো রেগে যাবে। তখন ওর রাগ ভাঙ্গানো দুস্কর হয়ে যাবে। বুঝছেন বাচ্চা মেয়েতো কিচ্ছু বুঝতে চায় না। কি যে এক ঝামেলায় পরেছি! বিশাল যন্ত্রনায় আছি।
.
লোকটা যদিও বলল যে বড় যন্ত্রনায় আছে কিন্তু তার মুখ দেখে তো সেই রকম মনে হল না। কেমন একটা সুখি সুখি ভাব তার চেহারায়। আমি বললাম,
- সে কি আপনার উপর প্রায়ই রাগ করে..?
- আর বলবেন না। বাচ্চা মেয়েগুলো নিয়ে এই হয়েছে সমস্যা। কথা নাই বার্তা নাই একটু উনিশ-বিশ হলেই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে। আমার কি মনে হয় জানেন ভাই সাহেব..?
আমি একটু অবাক হলাম লোকটা ভাই সাহেব বলায়।আমি লোকটার ছেলের বয়সের হবো।
আমার কেন জানি এই কথাতেই লোকটাকে পছন্দ হয়ে গেল । মনে হল লোকটা বেশ রসিক। আমি বললাম,
-তা এতো যখন যন্ত্রনা দেয় বিয়ে করার আগে ভাবেন নাই..?
লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
-আর বইলেন না। আগে জানবো কিভাবে। আর এই মেয়ের সাথে আমার বিয়ে করার কোন ইচ্ছাই ছিল না। বলতে পারেন ফেসে গেছি।
-মানে, ঠিক বুঝলাম না।
লোকটা একটু এদিক ওদিক তাকালো। দেখে নিল আশে পাশে কেউ আছে কি না। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে গলা বলল,
-ভাই আপনার সাথে কথা বলে ভাল লাগছে কিন্তু পরিচিত কাউকে বলতে সাহস হচ্ছে না। আপনাকে বলা যায়। বলব ?
- বলুন। সমস্যা নাই।
- আমার নাম অনজয়। অনজয় আহমেদ।
-আপনি ?
-আমি অপু।
লোকটা বলা শুরু করল,
- ছোট বেলা থেকেই আমার মেয়েদের সাথে প্রেম করার একটা দারুন ঝোক ছিল। এমনও হয়েছে একসাথে চার-পাঁচ জনের সাথে এক সাথে প্রেম করেছি। আমার চেহারা দেখছেন মোটামুটি খারাপ না। আর তখন মেয়েরা কেমন যেন এই চেহারা দেখে পটে যেত।
.
আমি লোকটার চেহারার দিকে ভাল করে তাকালাম। এখনও বেশ সুদর্শন তিনি।
-যাই হোক এমন একটা অবস্থা যে আশে-পাশের কোন মেয়েই বাদ নাই। এমন সময়ই সুভা আমাদের এলাকায় আসলো। একটা এলাকায় কোন সুন্দর মেয়ে আসলে কি হয়..? এলাকার যত চ্যাংড়া পোলাপাইন আছে সব পেছনে লেগে যায়! সুভার পেছনেও সবাই লেগে গেল। কিন্তু এই মেয়ে কারো দ্বারাই পটলো না। শেষে আমি প্রজেক্ট হাতে নিলাম।
আমি খানিকটা কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
- তারপর।
- সত্যি কথা বলতে কি সুভা আমার দ্বারাও ঠিক মত পটছিল না। সঠিক কারনটা বুঝতে পারলাম কয়েক দিন পরে। সুভার এক খালাতো ভাইয়ের সাথে তার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। খুব জলদি তাদের বিয়ে হয়ে যাবে। এই জন্য সে কারো সাথে রিলেশন করবে না।
- তারপর ?
- আমি তবুও পিছু ছাড়লাম না। আমার সাথে রিলেশন করবে না বললেও ঠিকই আমার সাথে কথা বলত। মাঝে মাঝে দেখাও করতো। আমি ঠিক বুঝতে পারতাম যে বিয়ের ঐ ব্যাপারটা না থাকলে সুভা রাজি হয়ে যেত। এভাবেই চলতে লাগলো। দু-তিন মাস পরে একদিন সন্ধ্যার দিকে সুভা আমাকে ফোন দিল।
- কোথায় আপনি..?(সুভা)
- এই তো। কি ব্যাপার..?(অনজয়)
- আপনি এখনই আমাদের ছাদে আসেন।
- এখনই..?
আমার জন্য একটা ধাক্কা অপেক্ষা করছিল। আমি ছাদে পৌছেছি আর সুভা সোজা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি এতোটাই অবাক হলাম কিছুক্ষন কোন কথাই বলতে পারলাম না।
- কি হয়েছে..?(অনজয়)
কোন মতে বললাম।
- আজকে সব বাঁধা দুর হয়ে গেছে।(সুভা)
- মানে ?
তার খালাতো ভাই যার সাথে তার বিয়ে ঠিক ছিল সে এক মেয়ে বিয়ে করে ফেলেছে। এই জন্য তার আর কোন বাঁধা নেই।
এই টুকু বলেই অনজয় আহমেদ থামলেন কিছুক্ষন।
আমি একটু হেসে বললাম,
- আরে তাহলে তো কেললা ফটে! আপনি তো জিতে গেলেন।
- তা গেলাম। কিন্তু আসল জিনিসটা আর কয়দিন পরে টের পেলাম।
-কি রকম..?
-না দেখুন , আমি সবার সাথেই টাইম পাস করতাম। কোন সিরিয়াস কিছু ছিল না। কিন্তু সুভা খুব সিরিয়াস ছিল। কদিন পরেই আমি টের পেলাম।
- কি রকম..?
- তারও মাস খানেক পরের কথা।সুভার বাবা আমাদের বাসায় এসে আমার আর সুভার সম্পর্ক কথা বলে যান। বাবা আমাকে জিজ্ঞাস করলেন,
- তোমার কি সামাদের(সুভার বাবা) মেয়ের সাথে কোন সম্পর্ক আছে? (বাবা)
আমি খানিকটা ইতস্তত করে বললাম
- জ্বি।
আর কিছু বললেন না। এর তিনদিন পর আমাকে আম্মা বললেন আমার বিয়ে ঠিক করেছেন সুভার সাথে। আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম এই কথা শুনে।
কি বলবো অপু সাহেব, জীবনে অনেক প্রেম করেছি অনেক টাইম পাস করেছি।কোনদিন এই পরিস্থিতে পরব বুঝতেই পারি নি।এমন পেঁচে ডুকেছি যে বাসায়ও কিছু বলতে পারছি না।
.
দেখলাম অনজয় সাহেবের চোখ ভিজে উঠেছে। তিনি সেটা লুকানোর চেষ্টা করলেন না।
- তারপর..?
- তারপর আর কি..? সুভাকে বিয়ে করতে হয়। আর তখন থেকেই এই এই যন্ত্রনা বয়ে বেড়াচ্ছি ।
আমি লক্ষ্য করলাম অনজয় সাহেবের চোখটা ভেজা আর মুখে একটা অদ্ভুদ হাসি লেগে আছে সুখি মানুষের হাসি ।
- কি আমি তোমাকে যন্ত্রনা দেই।
আমরা দুজনেই একসাথে পিছনে ঘুরে তাকালাম। ৪৩-৪৫ বছরের এক মহিলা দাড়িয়ে । মুখে কপট রাগের ত
ভাব । দেখলাম অনজয় সাহেব হই হই করতে করতে উঠে গেল।
- আরে কে বলে তুমি আমাকে যন্ত্রনা দেও! তুমি তো আমাকে ...
- থাক আর ঢং করতে হবে না।
- আরে!! তুমি আসছিলা না তাই অপু ভাইয়ের সাথে একটু গল্প করছিলাম।
- হয়েছে।
তারপর অনজন সাহেবের বউ আমার দিকে তাকিয়ে খানিকটা লজ্জিত কন্ঠে বলল,
- আপনাকে নিশ্চই অনেক বিরক্ত করেছে।তাই না..?
- না না ঠিক আছে। আমি একদম বিরক্ত হই নি। বরং আরো ভাল লেগেছে।
- এতো কথা বলতে পারে ও। শুনুন ওর কথা আপনি একটুও বিশ্বাস করবেন না। মানুষকে এতো গল্প দিতে পারে ও।
অনজয় সাহেব বলে উঠল
- আমি গল্প দেই..? আমি..?
- শুনো কথা বলবা না।
আমি আর বসে থাকি না। ওরা দুজন এখন মনের সুখে ঝগরা করুক । আমি ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলাম।
হাটতে হাটতেই হঠাৎ আমার মনটা কেন জানি বিষন্ন হয়ে গেল। মনে হল এমন যন্ত্রনাওয়ালী সঙ্গী থাকলে মন্দ হত না !
ওহ আমি তো তমার কথা বলতে ভুলে গেছি আমি আর তমা একসাথে থাকি আমাদের ছোট্ট একটা সংসার আছে।
অন্য একদিন বলবো আমার আর তমার কাহিনী।


লেখক: অপু আহমেদ

2 Comments

Previous Post Next Post